"আবার হৈচৈ-এর মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও আশফাক নিপুণের মতো নির্মাতারা বাজার ডমিনেশনের দিকে এগোচ্ছে। অবস্থা এমন যে হৈচৈ এখন টাকার বান্ডিল (নাকি রুপির বান্ডিল) নিয়ে বাংলাদেশী নির্মাতাদের পিছনে ঘুরছে। সম্প্রতি দেখলাম বাংলাদেশী নির্মাতাদের আটটি প্রডাকশন সাইন-আপ হয়েছে এই একটা প্ল্যাটফর্মেই।"
—তাসনিম খলিল, ফেসবুক, ২ মার্চ ২০২৩
তাসনিম খলিল সরকার বিরোধিতার বাইরের জিনিসগুলি ভাল বুঝতে পারেন না। বাজার বা অর্থনীতিও যে বোঝেন তা মনে হইল না। সংস্কৃতি বা কালচার জিনিসটা একেবারেই বোঝেন না। দেশ জিনিসটারে উনি প্রবাস দিয়া বোঝেন।
ভদ্রলোক কলকাতার বই বিক্রেতারা একুশের বইমেলা দখল করলেও যে কোনো সমস্যা হবে না তারই সমর্থনে এই তুলনাটি টানছেন। সেখানে দেখলাম অনেক দেশপ্রেমিক 'বেকুব'রা সমানে লাইক দিতেছে!
এখন এতে সমস্যা কোথায়? 'এতে' বলতে লাইক দেওয়ায় না, খলিলের এই ওটিটি আলাপে।
২.
আমাদের গভীর ভাবে ভাবতে হবে, কেন কলকাতার শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস মালিকানাধীন হইচই-এর কাড়ি কাড়ি বাংলাদেশীয় পরিচালক দরকার? তারা প্রতিভার মূল্য দিতে চায় বইলা বোন্দা বোন্দা রুপি লইয়া দেশে আইতেছে মনে হয় আপনাদের?
নো।
তারা দেখে এইখানকার দক্ষ ডিরেক্টরদের মধ্যে কিনি কিনি কলকাতার মানের ও রুচির সিজন বানাইতে সক্ষম। দেইখা তারে তারে ধইরা ধইরা হইচই-এ ভরতে চায় তারা।
যাদের নিজস্বতা আছে, যারা কলকাতার বোতলের সাইজে নিজেদের বন্দি করে নাই তাদের বাদ দিয়া যারা সহজে নিজেদের পুরাই বদলাইয়া ফেলতে পারবে তাদেরকে বাছাই করে তারা। কেন করে? হিসাব সহজ।
তারা বাংলাদেশী দর্শকদের অর্থাৎ ক্রেতাদের দখল করতে চায়।
চায় এদেশীয় ডিরেক্টরদের এমন কাজ যা যুগপৎ কলকাতা ও বাংলাদেশকে সার্ভ করতে পারবে।
তা করতে গিয়া অধিক কলকাতা ও কম বাংলাদেশ ধরনের ঘোটা মূলক সিজন বানায় হইচই, থ্রু বাংলাদেশী ডিরেক্টর ও স্ক্রিপ্ট রাইটার।
তো এই গান্ধার বা মিশ্রিত সংস্কৃতির ফিল্মের কারণে এইখানকার ফিল্ম আর কোনোদিন মাথা তুইলা দাঁড়াইতে পারবে?
পারবে না।
যেটি দাঁড়াবে তা হইল কলকাতার মেইল অর্গানের মাথাটি, অ্যান্ড বডির কিছু অংশ বাংলাদেশের।
৩.
তো সেই কলকাতা প্রভাবিত মিশ্র সংস্কৃতির ফিল্ম কলকাতাও যেমন দেখবে, তেমনি বাংলাদেশের ইতোমধ্যে কনভার্টেড কলকাত্তাঅলারাও দেখবে। ফলে হইচই কম খরচে দুই বাংলা কভার করতে পারবে।
এরই সোয়াস্তি গাইতেছেন তাসনিম।
নিজের সংস্কৃতির প্রতি প্রেম না থাকলেই এমন গাওয়া যায়। অবশ্য ফেসবুকেই জানাইছেন যে উনি বাঙালী না—ছিলটি বা সিলেটি।
তা, বাঙালী না হইলেই বাংলাদেশী সংস্কৃতির গো য়া মারতে চাইতে হবে! আর সিলেট কি বাংলাদেশ না?
৪.
নাগরি হরফের দোহাই দিয়া অনেকেই অতীত নাগরি হরফ ব্যবহারকারী অঞ্চলে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা লালন করেন। সম্ভবত তারই দূরকৌশলগত কারণে দুই বাংলার একত্রিকরণে তাদের সক্রিয় থাকতে দেখা যায়।
উইকিপিডিয়া অনুসারে "সিলেটি নাগরি লিপি বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের এবং ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকায় ব্যবহৃত একটি লিপি। সিলেটের বাইরে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ জেলায় এই লিপির প্রচলন ছিল বলে জানা যায়।"
এই বিষয়ে আমার কোনো সমালোচনা নাই। রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা একেক জনের একেক রকম হয়। সে কারণেই ভোট ব্যবস্থা। সে কারণেই মানুষের দাবি প্রকাশের স্বাধীনতা।
কিন্তু ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে দাবি আমরা বাংলাদেশীয় বাংলা ভাষাভাষীরা প্রত্যাখ্যান করি, নাগরি হরফের অ্যাকটিভিস্টরা তারই জয়গান কেন করেন তা বোঝা দরকার।
ভাষা যে দুই দেশ বা অঞ্চলকে একত্রিত রাখতে পারে না তার উদাহরণ পৃথিবীতে কম নাই।
৫.
যদি নাগরি হরফের অ্যাকটিভিস্টরা বাংলা ভাষাকে তাদের শত্রু জ্ঞান করেন তবে এর পরাজয় তারা চাইতে পারেন। শাসক ভাষার পরাজয় সকলেই কামনা করে। আমরাও এক সময় উর্দুর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবাপন্ন ছিলাম। কালের বিবর্তনে তা একটু কমছে।
তো নাগরি হরফের অ্যাকটিভিস্টরা চাইতে পারেন মাড়োয়ারি অধ্যুষিত কলকাতা যেমন হিন্দি ভাষার কব্জায় চইলা গেছে আমাদের এইখানকার ভাষা ও সংস্কৃতি তেমনই প্রথমে কলকাতার ও পরে হিন্দির কব্জায় চইলা যাউক।
সেইটা খুব যে দুরাশা তা নয়। সাবধান না থাকলে তেমন তেমন ঘটতেই পারে।
৬.
কলকাতার দেজ প্রকাশনীর লোকেরা ঘুইরা গেছে এই বইমেলা। আমার সঙ্গে একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশক তাদের পরিচয়ও করাইয়া দিছেন। অভিযান প্রকাশনীর লোকেরাও আসছিল। তাদের লগেও সাক্ষাৎ হইছে এক ঝলক।
আরও কারা আসছিল গোপনে তা আমি জানি না। কিন্তু তাদেরও চাহিদা বাংলাদেশের ক্রেতা ও বাজার দখল।
তাসনিম খলিল সম্ভবত এসব কারণেই আশফাক নিপুণদের কলকাতা বন্দোবস্তরে এত বেশি গুরুত্ব দিতে চাইতেছেন।
আল্লাহ তাদের হেদায়েৎ করুন।
৭.
আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে এইসব হাইব্রিড মিশনারীদের নিয়োগ বা অনিয়োগকৃত দালালদের হাত হইতে ভগবানই রক্ষা করবেন।
৩/৩/২০২৩
সিনেমা আমদানীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। সরকার আগ্রহী ছিল ভারতীয় সিনেমা আমদানীর জন্য। সেই সময় আমরা প্রতিবাদ করছিলাম নানা উপায়ে (https://bit.ly/3moLkhZ)। সিনেমা আমদানীর মাধ্যমে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে শক্তিশালী হওয়ার কথা তখন বহু লোকে বলছিল। আমদানীর দশ বছর পরে কি দেখা গেলো? সিনেমা যা শক্তিশালী হইছে নিজের কারণেই, আমদানী কোন ভূমিকা রাখে নাই। এই অঞ্চলের ওটিটি, এই দেশের বই - এগুলাকে বিকাশের সুযোগ দিলেই শক্তিশালী হবে, ঐদেশ থেকে নিয়া আসলে আমাদের বাজারে ওদের ভাগটাই বড় হবে কেবল, ওদের বাজারে আমাদের ভাগ কিছু বাড়বে না। এইক্ষেত্রে যৌথপ্রযোজনার সিনেমাগুলাই উদাহরণ হিসেবে দেখা যাইতে পারে।
আপনাকে ধন্যবাদ। কাউকে তো বলতেই হবে।