গল্পে নারী বা পুরুষ অবমাননা করা যাবে না কেন
হাসনাত আবদুল হাই
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলছেন, “বিতর্কিত গল্প প্রকাশের জন্য সংক্ষুব্ধ কেউ প্রথম আলোর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।” আমি মনে করি তথ্যমন্ত্রী ঠিকই বলছেন। যদি মামলা করার মেরিট না থাকে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের আপত্তির মেরিট তাইলে থাকে না। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নৈতিকতা দিয়া সংক্ষুব্ধ হইলে হবে না। আইনের দিক থিকা যদি খারিজ হইয়া যায় মামলা তাইলে বৃথাই সংক্ষুব্ধ হওয়া হবে!
হাসনাত আবদুল হাই সাহেবের গল্পে যেহেতু শাহবাগ আন্দোলন ও কিছু ব্যক্তির প্রতি ইঙ্গিত আছে মানহানির মামলা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি করতেই পারেন। এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা হাসনাত সাহেবরে মাদারচোদ ইত্যাদি গাইল পারছেন তাগো বিরুদ্ধেও হাসনাত মামলা করতে পারেন। মামলা ভদ্রজনোচিত অ্যাকশন।
আমি একটু ভিন্ন জায়গায় যাই।
২.
ধরা যাউক অন্য কারো গল্প। যেইখানে শাহবাগ নাই। বা শ্লোগানকারী নাই। কিন্তু যে চরিত্র বানাইছেন হাসনাত তা আছে। মফস্বল থিকা আসা মেয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। চরিত্রের অবমাননাময় বর্ণনা হাসনাত সাহেবের গল্পের মতই। তো সেই গল্প কি লিখতে দিবেন আপনারা গল্পকারদের?
নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অর্থাৎ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কোনো মেয়ের অবমাননার বর্ণনা আপনারা পড়তে রাজিই না। চমৎকার! হেফাজত আসার আর দরকার কী। আমরা যথেষ্ট হেফাজতেই তো আছি মনে হয়!
ধরেন, হাসান আজিজুল হকের গল্প আত্মজা ও একটি করবী গাছ–যে রুকু–সেইখানেও কি নারীরে অবমাননা করা ছাড়া তার বর্ণনা সম্ভব? বা আমরা যে গল্পে পতিতা, বেশ্যা ইত্যাদি রূপে মেয়েদের আনি তা কি নারীর অবমাননাই? অবমানিতের বর্ণনা কি কেবল অবমাননাই? সে অর্থে তো পুরুষ নিয়া কিছু লেখলে পুরুষ অবমাননা। কী নিয়া লিখবেন গল্পকাররা? তা কি ব্লগাররা আর হেফাজতিরা ঠিক কইরা দেবেন!
এখন আমাদের গল্পে অবমানিত চরিত্র কারা হবে, পতিতা কারা হবে, খারাপ লোক কারা হবে? কোন শ্রেণী থিকা তাদের আসতে হবে গল্পে? নাকি আনাই যাবে না!–তা কারা ঠিক কইরা দিবেন?
যদি ধইরা নেই গল্পে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মধ্যবিত্তরে অবমানিত দেখানো যাবে না, পতিতা দেখানো যাবে না তবে কি অবমানিত বা পতিতা হইতে হবে ফকিন্নির বাচ্চাদেরই—যাদের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নাই বা যারা ব্লগার নয়? যারা অলরেডি অবমানিত তবে তারাই শুধু অবমানিত হবে গল্পে! তারা আমাদের কেউ না? তাদের নিয়া আমাদের কোনো আপত্তি আদৌ নাই তাইলে আর?
৩.
অবশ্যই কোনো গল্পে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মানহানি নিন্দনীয় ও মামলাযোগ্য। কিন্তু এই বাহানায় গল্পমাত্রকেই শুভ বর্ণনার আধার কইরা তোলা সাহিত্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। মোল্লা ও ব্লগার মোল্লাদের হাত থিকা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ব্যক্তির অধিকারকে কে রক্ষা করবে!
সাহিত্যিকদেরই তা করতে হবে।
১৬/৪/২০১৩
সাবস্ক্রিপশন: পেইড ফ্রম বাংলাদেশ