কেন আমি রায়হান রাফীকে বড় ডিরেক্টর মনে করি
রায়হান রাফী (জ. সিলেট, ৩ মার্চ ১৯৭৯)
আমার চোখে রায়হান রাফী এই সময়ের সবচাইতে বড় ডিরেক্টর।
তার এখনকার কাজে অপ্রাসঙ্গিক কাব্য এবং ক্লিশে কম। যেই ক্লিশে আমাদের প্রায় সব চলচ্চিত্রকারেরই—এমনকি তারেক মাসুদেরও—অনিরাময়যোগ্য বৈশিষ্ট্য। সাহিত্য কম বোঝার কারণে এই রকম ক্লিশের আমদানি ঘটে। তখনই, যখন চলচ্চিত্রেই সাহিত্যগিরি শুরু করেন ডিরেক্টররা। প্রায় সকলে। তাদের সাহিত্যিক হইতে না পারার উসুল সিনেমার উপর আরোপ করেন তারা।
রায়হান রাফী দুইটা কারণে এই ক্লিশে ও নাকি কাব্য থিকা রক্ষা পাইছেন বইলা মনে হয়। এক, তিনি বলিউডরে অনুসরণ না কইরা হলিউড বা হলিউড অনুসরণকারী তামিল-মালয়ালম সিনেমার পথে গেছেন। তবে তাদের গাঞ্জাখুরিটা নেন নাই। দুই হইল, তিনি চিন্তা করেন ভিস্যুয়ালি। এইটা করতে গিয়া সিনেমার চরিত্র, পরিস্থিতি ও গতি যথাযথ রাখতে পারেন। অর্থাৎ স্ক্রিপ্ট বা উপন্যাসের চরিত্রের মতো অস্পষ্ট কিছু থাকে না তার চরিত্রেরা। প্রতিটি চরিত্রই যথা পরিবেশে নিজস্বতা প্রাপ্ত হয়। দৃশ্যের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ডিটেইল বা বিস্তার থাকে না।
তবে মনে হয়, যে কারণটি তাকে কোনো আর্টগত অসাধারণ ফলাফল দিবে না শেষ পর্যন্ত তা হইল, তিনি হলিউডের দিকেই ক্রমাগত যাইতেছেন...। তা আরো হলিউডই তৈরি করতে থাকবে ক্রমাগত। আরো স্মার্ট, আরো বাহুল্যবর্জিত, আরো নির্দিষ্ট জনরার সিনেমাই তিনি বানাইতে থাকবেন—যদি এই পথে থাকেন।
আমি মনে করি, রাফীর যে সার্বিক গুণ তাতে বাংলাদেশের সিনেমার জন্য একটা জনপদ থিকা উইঠা আসা ল্যাঙ্গুয়েজ তিনি আবিষ্কার করতে সক্ষম হবেন, চাইলে। অবশ্যই তাকে ঋত্বিক, সত্যজিৎ, আমজাদ হোসেনদের বাদ দিয়াই তা করতে হবে। নট অনলি মুখের বা বলার ভাষা, বরং নতুন একটা সিনেমার ভাষা, যেইটা আমাদের বাংলার অনেক অন্তর্নিহিত বিষয়-আশয় নিয়া আসবে। আমাদের সিনেমায় যেইটা কম আছে—ট্যারানটিনোতে বেশি আছে—সেই ভায়োলেন্সই একমাত্র বিষয় হইয়া দাঁড়াবে না। আমি তার সেই এখনো অনাবিষ্কৃত ভাষার আবিষ্কারের অপেক্ষায় থাকলাম।
৭/৩/২০২৩