স্বৈরাচার ও “বিপরীত স্বৈরাচার” এর সেন্সর ব্যবস্থা যেভাবে কাজ করে
স্বৈরাচারের সময়ে লেখক-বুদ্ধিজীবীদের উপর দুই দিককার চাপ থাকে।
এক হইল, কিছু বিষয়ে কথা বলতে যে আপনি পারবেন না তার বিভিন্ন আইনগত ও প্রশাসনিক চাপ এবং সমাজে ছড়াইয়া দেওয়া নানান মিথ ও ভীতি উৎপাদন ব্যবস্থা। যেই ব্যবস্থাটি তৈরি হয় মিডিয়া, সাংবাদিক, সরকারপন্থী লেখক, বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতি কর্মীদের বিবিধ “করা যাবে না”, “লেখা যাবে না”-এর সমন্বয়ে।
এর বিপরীতটা হইল যারা সরকার বিরোধিতা করেন, তাদের দিককার চাপ বা আশা।
তাদের দিক থিকাও একটা উষ্মা ও ঘৃণামূলক চাপ থাকে স্বৈরাচারের সময়ে, লেখক-বুদ্ধিজীবীদের উপর। যে, সরকার বিরোধিতার কোন টাইমে লেখক-বুদ্ধিজীবীরা কোন ধরনের কথা বলবেন আর কোন ধরনের কথা বলতে পারবেন না।
যেই ধরনের কথা বলা না-জায়েজ তা বললে পরে তখন সামাজিক ভাবে লজ্জা দেওয়ার চেষ্টা চলে সরকার বিরোধী মিডিয়া, সাংবাদিক, সরকার বিরোধী লেখক, বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতি কর্মীদের তরফে।
আমার বিনীত প্রস্তাব, দুইটারেই আমরা স্বৈরাচারী সময়ের সমস্যা বিবেচনা করব।
২.
স্বৈরাচার বিরোধিতা করতে গিয়া যে “বিপরীত স্বৈরাচার” এর উদয় হয় তা আসলে স্বৈরাচারী ক্ষমতারই মিররিং বা অনুকরণ ক্রিয়া।
এইটারে বলতে পারেন শ্যাডো স্বৈরাচার বা ভূত স্বৈরাচারের শাসন। যেই ভূত আসল স্বৈরাচারের দেহ কামনা করে। ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে ভূতটি তার দেহ পাবে, কিন্তু তার মন, ইতিমধ্যে গইড়া ওঠা তার স্বৈরাচারী মন, আপনি কী করতে পারবেন কী করতে পারবেন না তার ছবক দিতে শুরু করছে!
যখন সরকার বিরোধী কার্যক্রম চলে তখন আনন্দ, বিনোদন সব চলতে দিলেও লেখক-বুদ্ধিজীবীদের উপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থের মত কইরা কিছু হারাম এরিয়া সাব্যস্ত কইরা দেয় ভূত স্বৈরাচারের সেন্সর বিভাগ।
এই ভূত তখন নিষেধাজ্ঞা দেয়, লেখক বা বুদ্ধিজীবী হিসাবে আপনি আর যাই করেন কিন্তু এই টাইমে এই আলাপ আপনি করতে পারবেন না যে “হুমায়ূন আহমেদ টিকবে কি টিকবে না”! বা কে বড় লেখক, কে ছোট। এই ধরনের কোনো আলাপ করতে পারবেন না এই সময়টায়। বিশেষত শাহবাগে গিয়া এই আলাপ করাই যাবে না!
লেখক-বুদ্ধিজীবীদের নিজস্ব যেইসব বিবেচনা তা বাদ দিয়া হয় নিরব থাকবেন নতুবা স্বৈরাচার বিরোধী আলাপ শুধু করতে পারবেন এই টাইমটায়!
যেন লেখালেখি বা লেখক সমাজ বা সাহিত্য ও শিল্পের নিজস্ব কোনো এলাকা নাই। জাস্ট রাজনীতির অনুকম্পায় তা বাঁইচা থাকে।
৩.
সেন্সর শুধু সরকার বা প্রশাসনের দিক থিকাই আপনার উপর কাজ করে তা না, যারা ক্ষমতায় আসতে চায় তারাও আগে থিকা সেন্সর তাক কইরা রাখে আপনিকী করবেন না করবেন তার উপর।
স্বৈরাচার বিরোধিতা মানে সেই ভূত সেন্সরেরও বিরোধিতা করা। আপনার উপর কী লিখতে পারবেন না মূলক যে কোনো নির্দেশরে অগ্রাহ্য করা।
২৭/১০/২০২৩