সাঈদ আহমদ (১/১/১৯৩১ - ২১/১/২০১০)
নাট্যকার সাঈদ আহমদের সঙ্গে আমার সদ্ভাবের শুরু ১৯৯২ সালে। সেই সময় চিত্রকর কালিদাস কর্মকারের বাংলা মোটরের বাড়িতে একটা পার্টির মধ্যে একদিন যাইচা তাঁর সঙ্গে পরিচিত হই আমি। বিশেষত অ্যাবসার্ড ড্রামা ব্যাপারে আমার তৎকালীন গভীর অনুরাগ তাঁর ব্যাপারে আমারে আগ্রহী করছিল। তিনি ফোন নম্বর দিয়া পরদিন তাঁর বাড়িতে যাইতে বলেন।
আমি সকালে তাঁর লালমাটিয়ার বাসায় যাই। তিনি তাঁর সংগ্রহের বই, চিঠিপত্র আর কিছু নথি দেখান। এবং অতিথি আপ্যায়ন করেন। খাওয়ার পরে ফল খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
আঙুলের গিঁটে সমস্যা থাকায় লিখতে অসুবিধা হইত তাঁর। ওনার অনুরোধে কিছু লেখার ডিকটেশান নিতে রাজি হই আমি। বলা যাইতে পারে, তাঁর লেখ্য গদ্যরীতিটি আমার ভালো লাগতো না। একটা নাটক (নাটকটা তিনি আর শেষ করেন নাই) নিয়া দুই দিন বসার পরে আমি এই বিরক্তিকর কাজটা আর করি নাই। ওই বিরানব্বইয়ে কিছুদিন সাঈদ ভাইরে বেশ কাছ থিকা দেখার সুযোগ হয় আমার। সাঈদ ভাই নিঃসন্তান আছিলেন। এই নিয়া তাঁর কোনো আক্ষেপ আছে কিনা জিগাইলে জানায়ছিলেন বাচ্চাকাচ্চা ব্যাপারটা ভেজালের। এইটা ঠিক যে তাঁর মধ্যে আমি বাৎসল্য রসের ছিটাফোঁটাও দেখি নাই।
ঢাকার সাংস্কৃতিক সমাবেশে তাঁর উপস্থিতি সব সময়ই নিতান্ত উজ্জ্বল ব্যাপার আছিল। বিবিধ অনুষ্ঠানে দেখা হইলে—এবং সব সময় পারভিন ভাবি সঙ্গে থাকতেন—সাঈদ ভাই সহাস্য স্নেহ সম্প্রদান করতেন (অন্য অনেকের মতো ওয়ান টু ওয়ান মৃদু হাসির অভ্যর্থনা তিনি করতেন না; যেটি দস্তুর)। সাঈদ আহমদের ব্যাপারে আমার বিবেচনা এই যে তিনি বৈঠক ইত্যাদিতে অনেক চিত্তাকর্ষক থাকতেন। তবে তাঁর ভাষা প্রায়ই ঢাকাইয়া থিকা শুদ্ধের দিকে চইলা যাইতে চাইত। আর তিনি ঘরের চাইতে বাইরে বেশি বন্ধুবৎসল আছিলেন। অর্থাৎ এক কালের এই সচিব ভদ্রলোকটি সমষ্টির মধ্যে বা সমাবেশগুলিতে তাঁর ব্যক্তিত্বের সবলতা ও সাফল্য উপলব্ধি করতেন।
১৯৯৯ সালে মুক্তকণ্ঠ পত্রিকার ‘খোলা জানালা’র জন্য এই সাক্ষাৎকার নেই আমি। ‘খোলা জানালা’র সম্পাদক আবু হাসান শাহরিয়ার সাক্ষাৎকারটার খোলামেলা ও লঘু চালের ব্যাপারটা সাদরে গ্রহণ করছিলেন। এবং কোনো কর্তন-বর্জন ছাড়াই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পরে সাঈদ ভাইরে একটা কপি দিয়া আসছিলাম। ইচ্ছা আছিল কখনো সাঈদ ভাইয়ের একটা বুক লেংথ ইন্টারভিউ নিব। সেইটা আর হইয়া উঠল না।
—ব্রাত্য রাইসু, ঢাকা ২০১০
১৯৯২ সালে নিউইয়র্কে তোলা ছবিতে সাঈদ আহমদ ও স্ত্রী পারভিন আহমদ; ছবি. নাসির আলী মামুন
সাঈদ আহমদ: আমি কত কথা কইতাম, কিন্ত এখন আফটার ব্রেইন হেমারেজ কথা কইতে পারি না। আর বড় কষ্ট কইরা কথা কইতে হয়। আস্তে আস্তে আস্তে আস্তে একটু ইমপ্রুভমেন্টের দিকে যাইতে আছি। আমার জীবনে একটা গণ্ডগোল হইয়া গেছে। বড় রকমের গণ্ডগোল। দুই বছর আড়াই বছর আগে আমারে কইলো যে তুমি দিল্লিতে আসো…
ব্রাত্য রাইসু: কে কইল?
গভর্ণমেন্ট অফ ইন্ডিয়া’র কালচারাল মিনিস্ট্রি। কইল যে তুমি দিল্লিতে আসো। তোমার সঙ্গে একটা বইয়ের পরামর্শ হবে। বই লেখার ব্যাপারে তারপরে আমি দিল্লি গেলাম। এই সব লিখো না।
ঠিক আছে অন্য প্রসঙ্গে যাই। শামসুর রাহমানের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক নিয়া বলেন।
শামসুর রাহমানের বাবা আর আমার বাবা দুই পার্টনার ছিল। নরায়ণগঞ্জে ডায়মন্ড টকিজ করত। নাইনটিন থারটি নাইনের যুদ্ধের আগে।