আংশিক পরধর্মচর্চার একটা লক্ষণ সমাজে ধীরে অবয়ব পাইতেছে। বেশ কিছুদিন যাবৎ জোরেশোরেই এক ধর্মের লোকে অন্য ধর্মের উৎসব পালনের মতো উদার আচরণ প্র্যাকটিস করতেছে।
এইটারে পজেটিভ হিসাবে দেখারও রেওয়াজ চালু হইছে।
আমি পজেটিভ-নেগেটিভ বাদ দিয়া কিছু প্রশ্ন কইরা বুঝতে চাইতেছি, এইটা শেষ পর্যন্ত সংস্কৃতির নামে ধর্মেরই পালন কিনা?
তাতে লোকসমাজে ধর্মের উপস্থিতি ও প্রভাব সামগ্রিকভাবে আরো বেশি কইরা ঘটবে কিনা?
২.
তো কিছু সামনে চইলা আসা প্রশ্ন এড়াইয়াই "বিশ্বাস ছাড়া ধর্মচর্চা"র এই ঘটনা ঘটতেছে।
তারা ধর্ম এড়াইয়াই ধর্মচর্চা করতেছেন।
চর্চাকারীরা এই আংশিক পরধর্মচর্চারে 'ধর্মচর্চা' বলতে রাজি নন, তারা বলেন 'কালচারাল উৎসব' বা 'সাংস্কৃতিক সহনশীলতা'।
অনেকটা আপনার প্রতিবেশী নারী বা পুরুষ এক রাত আপনার বাসায় থাইকা গিয়া বলল, আমি ওইখানে থাকি নাই, জাস্ট থাকাটা দেখতে গেছিলাম!
৩.
তো এক ধর্মের উৎসব অন্য ধর্মের লোকে পালন করলে, তা কেন ধর্মীয় উৎসব না হইয়া সাংস্কৃতিক উৎসব হইতে যাবে, এই ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
হিন্দু বা খ্রীষ্টান যখন মুসলমানের রোজা বা ঈদ শুরু করে সে আচরণগত অনুশীলন শুরু করে ইসলামের।
একই ঘটনা ঘটে যখন খ্রীষ্টান ও মুসলমান হিন্দুর পূজা শুরু করে, বা হিন্দু ও মুসলমান যখন পালন করে খ্রীষ্টানের মেরি ক্রিসমাস।
কথা হইতেছে, ধর্মীয় উপাচার পালনকে সাংস্কৃতিক উৎসব হিসাবে কী কারণে দেখবেন? যে সংস্কৃতির উৎস জাগ্রত 'ধর্ম' তা 'ধর্মীয় সংস্কৃতি' নয় কেন?
এর বাইরে এ বিষয়ে সবচাইতে যে গুরুতর প্রশ্নটি এড়ানো হয় তা হইল, অন্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসবকে আপনি যখন নিজ ধর্মের জায়গা থিকা স্রেফ সাংস্কৃতিক উৎসবে অবমূল্যায়িত করেন তখন কি সেই সেই ধর্মবিশ্বাসীদের প্রতি কোনো অবমাননা ঘটতেছে কিনা?
ধর্মের বেপারিরা যেহেতু এই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের আংশিক পরধর্মচর্চাকে নিজেদের ধর্মের বৃদ্ধি হিসাবে দেখেন, এই বিষয়ে তাই তারা গোল্ডেন সাইলেন্সের অবস্থান গ্রহণ করেন।
সব ধর্মেরই সমান আগ্রহ থাকে ভিন্ন ধর্মের সম্ভাব্য ধর্ম বদলকারীদের প্রতি।
এইটা ধর্ম ও ধর্মব্যবসার মূলধন।
৪.
কিন্তু এই আংশিক পরধর্মচর্চার মাধ্যমে ভিন্ন ধর্মগুলির প্রতি কোনো অবমাননা আসলেই ঘটতেছে কিনা সেইটা দার্শনিক প্রশ্ন, ধর্মের নয়।
৫.
'বিশ্বাস' যেখানে সকল ধর্মের নিয়ামক সেখানে বিশ্বাসহীন ধর্মীয় সংস্কৃতির চর্চা আসলে কী করে?
ধর্মকে খেয়ালখুশি বা অবহেলার বিষয়ে পরিণত করে!
আমি ধর্মের হুজুর বা পুরোহিত বা পাদ্রী না যে বলতে যাব ভিন্ন ধর্মীয় সংস্কৃতি পালন নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা সাজানো আমার কাজ না। আমি ধর্ম বিষয়ে সমাজের এই নতুন গ্রহণযোগ্যতাকে বুঝতে চাইতেছি।
যেইটা আমাদের আগামি দিনগুলিরে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক শেইপ দিতে যাইতেছে।
৬.
তো দেখা যাইতেছে, এই সময়ে আইসা আদৌ ধর্ম গ্রহণ না কইরাও ধর্ম পালন করা যায়, যাইতেছে!
গ্রহণ ছাড়াই ধর্ম পালনের এই সুযোগকেই আমি নাম দিতে চাই "আংশিক পরধর্মচর্চা"।
কেউ চাউক বা না চাউক, এইটা আধুনিক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
আপনাদের কী মনে হয়, যে কারণে এর শুরু, এর সমূহ চর্চা কি মানুষের মধ্যকার উগ্র ধর্মবোধ ও ধর্মের কারণে মানুষে মানুষে হিংসা ও ঘৃণা আরো বাড়াবে নাকি সত্যিই কমাবে?
আমার ধারণা বাড়াবে। যা বিপজ্জনক হইয়া উঠতে পারে।
বাড়াবে, কারণ আংশিক পরধর্মচর্চাকারীদের চাইতে প্রত্যক্ষ ভাবে আলাদা হওয়ার জন্য ধর্মের প্রথাগত বিশ্বাসীগণ আরো অধিক রক্ষণশীল ধর্মের চর্চা ও উপাচার শুরু করবেন।
তা ভিন্ন ধর্মের প্রতি সহনশীলতা বাড়াউক না বাড়াউক, নিজ ধর্মের মধ্যে হানাহানি বাড়াইতে পারে।
২৬/১২/২০২১
ধন্যবাদ।
আগে একবার পড়লাম। এখন আবার পড়ার সুযোগ পেলাম।