১.
‘ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস: জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি’ নামটা সুন্দর।
এর আহ্বায়ক ফরহাদ মজহার, সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ।
বিদেশীরা, যেমন আমেরিকান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্তাব্যক্তিরা, এই নামের অর্থ ভালই বুঝতে পারবে।
আমার ধারণা তাদের উদ্দেশেই এই কমিটি নতুন কইরা চালু করা হইছে।
"সিভিল রাইটস" এর সঙ্গে "ইনসাফ কায়েম" মিশ্রিত কইরা ধর্মীয় ভাবাদর্শের মানুষের সমর্থনের দরজাও ওপেন রাখা আছে।
২.
ফরহাদ মজহার জানাইছেন, ২০১৩ সালে জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি গঠন করা হইছিল। সেইটা এতদিন আর সক্রিয় করা হয় নাই।
তাইলে এতদিন পরে কেন এখন সক্রিয় করতে হইতেছে এই কমিটি? কেন নির্বাচনের আগেই এই কমিটি সক্রিয় করা হইল?
ইনসাফ কি আশা করে এইবারের নির্বাচনে সরকারের কোনো বাধা থাকবে না? নাকি নির্বাচনের বাক্সই এইবার সরকারের হাতে থাকবে না?
কিন্তু নির্বাচনই যে এই কমিটির নতুন ভাবে সক্রিয় হইয়া ওঠার কারণ তা স্পষ্ট।
বোঝা যায়, নির্বাচনে পাবলিক স্বার্থের পরাজয়ের ব্যাপারে তারা কিছু অনুমান বা আন্দাজ করতে পারছেন, যা ঠেকাইতে বিরোধী দলসমূহ বা সংগ্রামী জনতা যথেষ্ট না।
আমরা বিগত দুই নির্বাচন থিকা জানি বিদেশী শক্তির আশীর্বাদ ছাড়া কেবলই জনতার শক্তি দিয়া এই দেশে নির্বাচনে জিতা আইসা সরকার গঠনের সম্ভাবনা শূন্য।
বাংলাদেশ থেকে পেইড সাবস্ক্রিপশন চালু করবেন যেভাবে
৩.
অনেকের ধারণা আওয়ামী সরকারকে শক্তিশালী করতে এবং বিএনপিকে দুর্বল করতেই এই কমিটি চালু করা হইছে।
যেমনটি আগের বার করা হইছিল কামাল হোসেনের মাধ্যমে।
আমার তা মনে হয় না। যদিও এমন চিন্তার প্রতিফলন দেখা গেছে বিএনপির সাম্প্রতিক অ্যাকশনে।
ইনসাফ কায়েম কমিটিতে থাকার কারণে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি তার ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে দলটির সব পদ থেকে বহিষ্কার করছে।
শওকত মাহমুদ জানাইছেন, এই বহিঃষ্কার দুঃখজনক!
শওকত মাহমুদ কি জানতেন না জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটিতে ঢুকলে তাকে বহিঃষ্কার করা হইতে পারে?
আমার ধারণা তিনি জানতেন।
তাইলে কেন তিনি বহিঃষ্কৃত হইতে রাজি হইলেন?
ভাবা দরকার।
শওকত মাহমুদ
৪.
যে সব কারণে শওকত মাহমুদ বহিঃষ্কৃত হইতে রাজি হইতে পারেন সে বিষয়ে আমার ভাবনা নিম্নরূপ:
ক. শওকত মাহমুদ ধইরা নিছেন অনেক মুলা দেখাইলেও আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন শেষ পর্যন্ত বিএনপিরে বাংলাদেশের সিংহাসনে আসলে বসতে দিবে না। না দিলে তার বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের পদও আর থাকবে না।
খ. তিনি ভাবছেন আওয়ামী লীগরে সরাইয়া ইন্ডিয়া চায় বাংলাদেশের সিংহাসনে সব শর্ত মাইনা এইবার বসুক বিএনপি? এবং তাতে দেশের অবস্থার কোনো বদল আসবে না তাই এই বহিঃষ্কার ইজ ওকে।
গ. ফরহাদ মজহার এবং শওকত মাহমুদ মনে করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তখতে বসানোর যে পশ্চিমা মেশিন সগর্জনে চালু করা হইছে যেকোনো মূল্যে এইটা ঠেকাইতে হবে। কারণ ইউনূসের সিংহাসনে বসা মানে বাংলাদেশ এর পুরাপুরি পশ্চিমের বাজারে পরিণত হওয়া।
ঘ. আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিক থিকা ড. ইউনূসের চাইতে জাতীয় সরকার আকর্ষণীয় মনে হইতে পারে। অন্তত এই রকম একটা অপশন যে আছে তা তাদের জানাইতে দোষ কী?
আমার ধারণা "ইউনূস নাকি জাতীয় সরকার" এই অপশনটি "আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি"র চাইতে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে অধিক সময়োপযোগী মনে হইতে পারে।
জাতীয় সরকার গঠন হইলে পরবর্তীতে তো বিএনপিই আসবে এমন একটা আশা থিকাই কি তবে শওকত মাহমুদ ইনসাফ কায়েম কমিটিতে জড়াইলেন?
জাতীয় সরকার গঠন করা গেলে সেখান থিকা কে তাকে বহিঃষ্কার করবে, বলেন?
৫.
উপসংহার: জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির মূল উদ্দেশ্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঠেকানো।
২১/৩/২০২৩
শওকত মাহমুদ কেন বিএনপি থিকা বহিঃষ্কৃত হইতে চাইলেন অথবা জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি আসলে কী চায়?
লেখাটা পড়লাম।
ভাবনার ধারাবাহিকতা ভালো, সুপাঠ্য৷, তবে ইউটোপীয়।
ডঃ ইউনুসকে ঠেকাতে ফরহাদ মজহারের ইনসাফ প্রচেষ্টা উৎকাল্পনিক।
তবে আমেরিকা ও তাঁর পশ্চিমা মিত্রগণ ২০১৩-২০১৮র মত ভারতের চশমা লাগিয়ে বাংলাদেশকে দেখবেনা। ইন্ডিয়ায় ডঃ ইউনুসের সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফরহাদ মজহার নিজেকে যতবড় পন্ডিতই ভাবুকনা কেন, তিনি যে পশ্চিমাদের কাছে বা আমেরিকান লবিতে ডঃ ইউনুসের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার কাছে নস্যি, তা বোধকরি তিনি নিজেও জানেন।
তবে ফরহাদ মজহারের ইনসাফ নিয়ে নড়াচড়ায়, আগামী দিনগুলিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঝাঁকুনি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।