উদ্ভাবন বা আবিষ্কারের মালিকানা বিজ্ঞানের নয়
আপনি যখন কোনো কিছু উদ্ভাবন করেন তখন বিজ্ঞান দেখাইতে চায় এইটা তার নিজের উদ্ভাবন বা আবিষ্কার।
কেন এই রকম মালিকানা চায় বিজ্ঞান?
বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, সূত্র বা থিওরি ব্যবহার কইরা আবিষ্কার মানেই বিজ্ঞানেরই সেই আবিষ্কার এমন ধারণার কারণ কী?
উদ্ভাবন বা আবিষ্কারকে বিজ্ঞানের বিষয় কইরা নেওয়াটা এক রকমের জবরদখল। এর মধ্য দিয়া সত্য বলতে বস্তুগত সত্যরে পরম সত্য দাবি করার ঘটনা ঘটে। বিজ্ঞানরে দর্শন হিসাবে গ্রহণ করতে গেলেই এই গণ্ডগোলটা আপনি দেখতে পাইবেন। যে হোয়াই, আবিষ্কার বা উদ্ভাবন মাত্রই বিজ্ঞানের বিষয়?
আবিষ্কারটা তো মানব সভ্যতার বা মানবজাতির অংশ হওয়ার কথা। তা না হইয়া তা কেন স্রেফ বিজ্ঞানের কর্তৃত্বাধীন বিষয় হইয়া দাঁড়ায়?
কারণ বিজ্ঞান মনে করে সে ভবিষ্যতের, কাজেই মানব সভ্যতার বাইরের কোনো জিনিস। এই ধারণাটা ভুয়া ধারণা। এর ফলে আসলে কী ঘটে?
এর ফলে নতুন আবিষ্কারগুলি যে সাধারণ মানুষের মালিকানার না, বরং তারা এর সুযোগ নিতেছে, তারা এগুলি নষ্ট কইরা ফেলবে--এই ধরনের একটা নৈতিক প্রপাগান্ডা চালাইতে পারে বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানের দর্শন। মানুষকে বিজ্ঞানের উপযুক্ত ও অনুপযুক্ত মানুষ হিসাবে দুই ভাগ কইরা ফেলে বিজ্ঞান। তারা বর্তমান মানুষের সঙ্গে বিজ্ঞানের বিভাজন তৈরি করে এর মধ্য দিয়া।
বিজ্ঞান হইয়া দাঁড়ায় বর্তমানে অবস্থিত ভবিষ্যতের কোনো বিষয় বা ফিউচার মানবের প্রকল্প। বর্তমানের লোকজন কেবলই এর ব্যবহারকারী। এই অসুখেরই সর্বোচ্চ রূপ হইতেছে সায়েন্স ফিকশন বা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী।
এগুলির মাধ্যমে মানুষ ও মানুষ যে সকল ধর্মসমূহের কারণে আজকের মানুষ, সেসবের মর্যাদা হ্রাস করে বিজ্ঞান।
যেখানে বিজ্ঞান নিজেই সাধারণ মানুষের অধীন একটা টুল বা বিষয় সেইখানে বিজ্ঞান কেন সাধারণ মানুষের গড হইয়া উঠতে চায়? বৈজ্ঞানিক শৃঙ্খলা ও সিদ্ধান্তকে বিজ্ঞান কেন দার্শনিক ট্রুথ হিসাবে দেখাইতে চায়? আমরা এই বিষয়ে কী করতে পারি?
বস্তুত যেকোনো আবিষ্কার শেষ পর্যন্ত মানব সভ্যতার আবিষ্কার। এর পদ্ধতি যেমন বৈজ্ঞানিক হইতে পারে, অবৈজ্ঞানিকও হইতে পারে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যেমন সূক্ষ্মতা আনতে পারে অবৈজ্ঞানিক বা দৈব পদ্ধতিতে গভীরতা আসতে পারে।
কিন্তু আবিষ্কার মাত্রই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে না ঘটলে তা গৌণ, এই চিন্তার মধ্যে দর্শনকে অবজ্ঞা করার ব্যাপার আছে।
মানুষের দার্শনিক উপলব্ধি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ঘটে না।
বিজ্ঞানে চর্চিত কর্মপদ্ধতি বা গবেষণার পন্থারে আপনি কেবলই কর্মপন্থা বা গবেষণা না ভাইবা বিজ্ঞান ভাবেন, সেখান থিকাই এই সমস্যার উৎপত্তি।
বিজ্ঞানের শৃঙ্খলা ও দর্শনের সঠিক অবস্থান নির্ণয়ের মাধ্যমেই বিজ্ঞানকে আমরা আবার মানুষের বিষয় কইরা তুলতে পারব।
তার দরকার আছে। বিজ্ঞানকে অলৌকিকের, জাদুর বা সত্যের মালিক হিসাবে দেখার চর্চা আমাদের বন্ধ করতে হবে।
১/৯/২০২৩