লালনের গান বা কবিতার বুদ্ধি সমস্যা
বাঙালী কবি, বুদ্ধিজীবী, ধর্মগুরু, সাধক ও সংস্কারক ফকির লালন শাহ (১৭৭৪-১৮৯০) এর কবিতা অর্থাৎ গানের বাণী বুদ্ধিনির্ভর, তাই কিছুটা সমস্যা তৈরি করে।
যেমন গানের কথাগুলিরে আপনি যদি কবিতা হিসাবে ধরেন তবে কিছু অ্যাম্বিগুইটি বা অস্পষ্টতার সামনে পড়বেন। কিছু রহস্যপূর্ণ বিষয় ও ভাবের অবতারণা পাইবেন যা ধাঁধা তৈরি করবে আপনার মধ্যে।
কিন্তু কী সেই ধাঁধার উত্তর সে জানা তো দূরের বিষয়, ধাঁধার মধ্যে প্রশ্নটা যে কী তাই আপনার বোঝা হবে না।
সুরের মায়াজাল আপনার কবিতার উপলব্ধিকে যতটুকু সাপোর্ট দিবে এই কবিতাগুলি ততটুকুই বোধ তৈরি করবে আপনার মধ্যে। খণ্ড খণ্ড বোধ, খণ্ড খণ্ড সত্যের ইঙ্গিত। এবং লাইফ স্টাইল মোটিভেশন ও উপদেশাবলি।
আর যদি আপনি বুদ্ধিগত বিবেচনায় যান, কবিতাগুলিকে পদ্য ধইরা এর আইডিয়া বা বুদ্ধিগত কারিকুরি বুঝতে চান, তাইলেও আপনি ফেইল করবেন।
কারণ যেই দেহবাদী গোত্রের প্রতি এই সমস্ত গানের বাণী নিবেদিত তাদের কাছে এর যেই বুদ্ধিগত ব্যাখ্যা জমা আছে সেইটাই কবিতাগুলির চূড়ান্ত বা ফিক্সড ব্যাখ্যা।
কবিতা যেমন অসীম অর্থ উৎপাদন করতে পারে ভোক্তা অনুসারে, লালনের গানে তা নিষেধ। এগুলি বরং অসীম অনর্থ তৈরি করতে সক্ষম। যদি না আপনি লালনের ঘরের লোকদের দ্বারস্থ হন।
লালনের দেহবাদী ভোক্তারাই তার গানের আসল তফসিরকারী। তাদের কৃত অর্থই আপনার খাইতে হবে। তার আগে সবই না-অর্থ।
এইটাই লালনের গানের বড় সমস্যা। "শুনতে মধুর, তবে বুঝতে নাই" সমস্যা।
এমনিতে যা আপনি বুঝবেন না তা থিকাও আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা ও আনন্দ পাইতে পারেন।
সে আনন্দ লালনে বিস্তর।
৯/৩/২০২৩